
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) পরিচ্ছন্ন বিভাগের উপ প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মবর্তার দায়িত্বে ছিলেন মোরশেদ;ুল আলম চৌধুরী। পদবীর আগে উপ থাকলেও মূলত প্রধানের দায়িত্ব পালন করতেন। আর সেই সুযোগে একের পর এক দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে। দুর্নীতির সেই টাকায় নামে বেনামে গড়েছেন অঢেল সম্পত্তি। এসব অপরাধের কারণে তাকে পরিচ্ছন্ন বিভাগ থেকে সরানো হয়েছে। তবে চাকরিবিধি উপেক্ষা করে আগ্রাবাদে কোটি টাকায় সুপারসপ দিয়ে নিজেই ব্যবসা করছেন বলে একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে। এসব বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে একাধিক অভিযোগ, মামলা থাকলেও শ্রমিক লীগের নেতা হওয়ার সুবাদে ও মেয়রের সাথে সখ্যতার ফলে সব অপরাধ ধামাচাপা দিতে সক্ষম হন।
বিভিন্ন দপ্তরে দেয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পরিচ্ছন্ন বিভাগের সুপরভাইজার থেকে পদোন্নতি পেয়ে চসিকের উপ প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা হন মোরশেদুল আলম চৌধুরী। মঞ্জুর আলম থেকে শুরু করে আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন ও রেজাউল করিমের সাথে ছিল গভীর সখ্যতা। আ.জ.ম নাছির উদ্দীনের ক্যাশিয়ার হিসেবে যত্রতত্র দুর্নীতি, লুটপাট, অবৈধ উপায়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যায়।
তার অবৈধ আয়ের উৎস নিম্নরূপ:
পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাছ থেকে কমিশন আদায়, মেয়রের ব্যাক্তিগত ক্যাশিয়ার সেজে বাঁশখালীর খোরশেদুল আলম থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন। চসিকের ডোর-টু-ডোর প্রোগ্রামে নিয়োগ বাণিজ্যে ৫০ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন। এমনকি ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের ছেলে, ভাতিজা, ভাগিনা, ভাই ও শ্যালককে চাকরী দিয়েছেন। একই প্রোগ্রামে ২১জন শ্রমিককে সুপারভাইজার পদে পদোন্নতি দিয়ে জন প্রতি ২ থেকে ৪ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। এছাড়া শ্রমিক নিয়োগে লাখ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অীভযোগ অঅছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। প্রকৌশল বিভাগের যান্ত্রিক শাখায় ৪১টি ওয়ার্ডে লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে টমটম গাড়িতে চালক নিয়োগ দিয়েছেন। চালকদের অধিকাংশেরই বৈধ লাইসেন্স নেই।
সাবেক মেয়র মনজুর আলমের সময় অস্থায়ী কর্মচারীদেরকে চাকুরীতে স্থায়ী করার জন্য হাইকোর্টে মামলা পরিচালনা ও মন্ত্রণালয়ে ঘুষ দেয়ার নাম করে জনপ্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা গ্রহণ করে আত্মসাৎ করেন। ২০১৭ সালে ১০জন ছাত্রীকে বাওয়া স্কুলে ভর্তি করে ১৫ লাখ টাকা আদায়।
চাঁদাবাজির বিষয়ে বাঁশখালী থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। (মামলা নং- ১৯ তারিখ-২৩/০১/২০১৫)। জি.আর মামলা ৪৬/১৫, যার চার্জশীট কোর্টে দাখিল হয়। এই মামলায় আটক হয়ে ১ মাস জেল খাটেন। নিয়ম অনুযায়ী তখন সে বরখাস্ত হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে উল্টো, পেয়েছেন পদোন্নতি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা হওয়ার পর ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেই ঠিকাদারদের সাথে আঁতাত করে কর্পোরেশনে ব্যবসা করা শুরু করেছেন
দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে প্রথমে সুপারভাইজার, পরে পরিদর্শক, তারপরে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে একচেটিয়ে দায়িত্ব পালন করেন মোরশেদ। সেই ওয়ার্ডের শ্রমিকদের কাছ থেকে মাসিক মোটা অংকের মাসোয়ারা নিয়ে কাজ না করিয়ে বেতন ভাতা উত্তোলন করতেন বলে বিশ্বস্ত সূত্র জানায়।
তার ক্ষমতার অপব্যবহার, অনৈতিক কর্মকান্ড ও স্বেচ্ছাচারীতার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবরে আবেদন করেছিলেন বাঁশখালীর একজন। সচিবালয়ের সিটি কর্পোরেশন-২ শাখার উপসচিব এর স্বাক্ষরিত পত্রে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, আয়কর ফাঁকি ও চোরাচালান সংক্রান্ত অভিযোগসমূহ তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্মসচিব পরিমল কুমার দেবকে এক মাসের সময় দিয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই সময়ের দলীয় প্রভাব খাটিয়ে সব কিছু ম্যানেজ করে পুরা বিষয়টি ধামাচাপা দিয়েছেন বলে চসিকের বিশ্বস্ত একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
মোরশেদ আলমের অঢেল সম্পদ:
দুর্নীতির টাকায় অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছন মোরশেদ আলম চৌধুরী। চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদ ও বাকলিয়াতে রয়েছে ভবন। আগ্রাবাদে কোটি টাকা মূল্যের চৌধুরী সপের মালিকও তিনি। নিজেই বসছেন দোকানে। বাঁশখালীর ইলশা গ্রামে তার নিজ নামে কয়েক কোটি টাকা মূল্যে জমি রয়েছে। এছাড়াও নামে-বেনামে নিজ গ্রাম ও চট্টগ্রাম শহরে অনেক সম্পদ রয়েছে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে সে শ্রমিক লীগের দাপটে চলার কারণে কেউ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারতো না। গতবছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৩১ আগষ্ট তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরীকে পরিচ্ছন্ন বিভাগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় অঞ্চল ১ এ সংযুক্ত করে ১ অক্টোবরের মধ্যে যোগদানের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের সাবেক উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী সকল অভিযোগ অস্বীকর করেন। তিনি অসুস্থ বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
প্রগতি টেলিভিশন/এফ.এম