২০২২ সালে ঘুষ নিয়ে ভাইরাল হওয়া মাগুরা জেলা শিক্ষা অফিসার আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ এখন জোড়ালো হয়েছে। গণমাধ্যমে খবরের পরও থামছে না তার অবৈধ কর্মকাণ্ড। বরং এখন আরো সচেতন হয়ে নিজ কক্ষের সিসিক্যামেরা বন্ধ রেখে করছেন নানা অনিয়ম। অভিযোগ রয়েছে এমপিওভুক্ত ও উচ্চতর স্কেল গ্রহণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষক, কর্মচারীদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে আসছেন তিনি। সর্বশেষ ৩ দিনের প্রশিক্ষণে খাবার, প্রশিক্ষণ সামগ্রী, ইন্টারনেট বিলের অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় ১০ লাখের উপর টাকা তসরুপের অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগী কর্মকর্তা কর্মচারীরা লিখিত অভিযোগে জানান, নিজ কক্ষের সিসি ক্যামেরা বন্ধ রেখে ঘুষ লেনদেন, এমপিওভুক্ত ও উচ্চতর স্কেল গ্রহণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষক, কর্মচারীদের থেকে ঘুষ নিয়ে আসছেন তিনি। স্থানীয়দের সাথে সখ্যতার কথা বলে অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের উপর দমনপীড়ন চালান। গত জুন মাসে শিক্ষা অফিসের তত্ত্বাবধানে ইনহাউজ প্রশিক্ষণে (আই এইচ টি) জেলার ২১শ শিক্ষকের ৩ দিনের প্রশিক্ষণে খাবার, প্রশিক্ষণ সামগ্রী, ইন্টারনেট বিলের অনিয়োমের মাধ্যমে প্রায় ১০ লাখের উপর টাকা তসরুপের অভিযোগ উঠেছে। এসব দুর্নীতি, অনিয়মের কারণে অফিসের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।

অনিয়মের বিষয়ে সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা প্রদ্যুৎ কুমার দাস স্বদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ সত্য। ট্রেনিং শেষে অনেক শিক্ষক বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। এছাড়া সিসিটিভির ফুটেজে ঘুষ লেনদেনের যে ভিডিও এবং প্রশিক্ষণের যে অনিয়ম নিজের চোখে দেখেছি, সেটি প্রমাণ করে তার বিরুদ্ধে ওঠা ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ সত্য। তার জন্য আমাদের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, জুন মাসে শিক্ষকদের ৩ দিনের ট্রেনিংয়ের সময় সকালের নাস্তা ১২০ টাকা বরাদ্দ হলেও ৫০ টাকার বেশি খরচ হয়নি। ২৫০ টাকার দুপুরের খাবার সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা, ফোল্ডারের উপকরণের মূল্য সর্বোচ্চ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা খরচ হতে পারে। মূল কথা খাবারের মান একদমই ভালো ছিল না। সব মিলিয়ে এর থেকে তিনি ১০ লক্ষ টাকার উপরে তসরুফ করেছেন।

লিখিত অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নজরুল বলেন, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা যাতে ট্রেনিং বিষয়ে কোনো কথা না বলতে পারে সেজন্য জেলা শিক্ষা অফিসার ট্রেনিংয়ে কোনো অনিয়ম হয়নি মর্মে প্রত্যয়ন নিয়ে আমাদের সেই প্রত্যয়নে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। আমরা লিখিত যে অভিযোগ করেছিলাম তা সঠিক নয় বলে এই প্রত্যয়নে উল্লেখ ছিল।
তিনি আরো বলেন, বদলির ক্ষমতা তার হাতে রয়েছে- এমন ভয়ভীতি দেখানোয় আমরা সাক্ষর করি। তবে অন্য কর্মকর্তারা সাক্ষর করেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, জেলা শিক্ষা অফিসার এবং ট্রেনিং কোঅর্ডিনেটর ট্রেনিংয়ে যে টাকা তছরুপ করেছে সেখান থেকে প্রত্যেককে কিছু টাকা দেবার জন্য অফার করে। আমরা এই অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে বিভিন্ন বিষয়ে ভয়-ভীতি দেখায়। বিশেষ করে বদলি করা হবে বলে ভয় দেখায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ২০২২ সালে অফিসের নিজ কক্ষে শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করতে ঘুষ নেন তিনি। যা সিসিক্যামেরায় রেকর্ড হয়। বিষয়টি নিয়ে তখন ৭১ টিভিতে খবর প্রকাশ হলে আলোচনায় আসেন এই শিক্ষা কর্মকর্তা। আওয়ামী লীগের নেতাদের ধরে সেই যাত্রায় বিষয়টি ম্যানেজ করেন তিনি। এরপর থেকেই নিজ কক্ষ এবং অফিসের হিসাব রক্ষকের কক্ষের সিসিক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। সিসিক্যামেরা তিনি নিজেই নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। এছাড়া ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর তিনি নিজেও পাল্টে গেছেন। এখন বিএনপি নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়েছেন।
তবে সব অভিযোগকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন মাগুরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আলমগীর কবির। তিনি বলেন, গত জুন মাসে জেলা শিক্ষা অফিসের অধীনে শিক্ষকদের একটি ট্রেনিং সমাপ্ত হয়েছে। সেটি সুন্দর ভাবে সমাপ্ত হয়েছে। খাবারের মানসহ ফাইল ফোল্ডার থেকে শুরু করে সব কিছুই ভাল হয়েছে এবং রুচি সম্মত ছিল। এ বিষয়ে শিক্ষক শিক্ষিকারা কোনো অভিযোগ করেনি। পাশাপাশি ৩২ জন ট্রেনার সুন্দরভাবে ট্রেনিং সমাপ্ত করতে পারায় শিক্ষা অফিসকে থ্যাংস লেটার দিয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে ট্রেনিংটা আমাদের ভালো হয়েছে। পাশাপাশি গত ৩ বছর আগে আমার অফিসের একজন সহকর্মী একটি মিথ্যা ভিডিও তথ্য যাচাই বাছাই ছাড়াই মিডিয়াতে প্রকাশ করিয়ে আমাকে বিব্রত করেছে। ওই সহকর্মী অন্যত্র বদলী হওয়ার কারণে বাইরে থেকে একের পর এক আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা।
প্রগতি টেলিভিশন/এফ.এম
সম্পাদক ও প্রকাশক: জাকির হোসেন
© All rights reserved © Progati Television