 
																
								
                                    
									
                                 
							
							 
                    
ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশে পদার্পণ । ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। দুই দশক পেরিয়ে আজ জবি শুধু শিক্ষার স্থান নয় এটি হয়ে উঠেছে ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সম্ভাবনার প্রতীক। স্থায়ী ক্যাম্পাসের অপেক্ষা, গবেষণায় সীমাবদ্ধতা তবুও জবির অগ্রযাত্রা থেমে নেই। দীর্ঘ এই যাত্রায় অর্জনের গল্প যেমন আছে, তেমনি আছে অবকাঠামোগত সংকট, গবেষণার সীমাবদ্ধতা ও অপূর্ণ স্বপ্নের বাস্তবতা।
জগন্নাথের ইতিহাস শুরু ১৮৫৮ সালে জগন্নাথ স্কুল হিসেবে, পরে জগন্নাথ কলেজ, এবং অবশেষে ২০০৫ সালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ।এই দীর্ঘ ১৬৭ বছরের শিক্ষা ঐতিহ্য একে দিয়েছে এক অনন্য মর্যাদা।
ঢাকার ইতিহাসবিদ অধ্যাপক আবদুল গনি বলেন“জগন্নাথ কেবল একটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এটি ঢাকার শিক্ষাগত ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অংশ। এই প্রতিষ্ঠান ঢাকার বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।”
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে রয়েছে ৬টি অনুষদ ও ৩৭টি বিভাগ, যেখানে পড়াশোনা করছে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী।
দুই দশকে শিক্ষক সংখ্যা বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি, তবে শিক্ষক সংকট ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ।
স্থায়ী ক্যাম্পাসের কাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুত সরকার বলছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই স্থানান্তর সম্ভব হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি  অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন“আমরা একবিংশ শতাব্দীর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নিজেদের প্রস্তুত করছি। স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর, গবেষণা তহবিল বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এগুলোই এখন আমাদের মূল অগ্রাধিকার।”
দুই দশকে জবির শিক্ষার্থীরা দেশি-বিদেশি প্রতিযোগিতা, স্কলারশিপ ও গবেষণা প্রকল্পে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে।
বিভিন্ন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণা প্রকাশ করছেন, যদিও গবেষণার বাজেট এখনও সীমিত।অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বলেন“আমাদের শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। কিন্তু গবেষণায় সহায়তা বাড়ানো গেলে আমরা আঞ্চলিক উন্নয়ন গবেষণার কেন্দ্র হতে পারব।”
দুই দশকে জবির সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা স্থায়ী ক্যাম্পাসের অভাব।ঢাকার পুরান ভবনগুলোতে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করায় শিক্ষার্থীরা মনে করেন এটি তাদের মানসম্মত শিক্ষা পরিবেশে প্রভাব ফেলছে।বাণিজ্য অনুষদের ছাত্র সায়েম আহমেদ বলেন“স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকায় আমরা অনেক সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আশা করি, একুশে পদার্পণে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।”
দুই দশকে জবির উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলো হলো
৩৭টি বিভাগে একাডেমিক সম্প্রসারণ
নতুন অনুষদ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা
ডিজিটাল প্রশাসনিক ব্যবস্থার সূচনা
আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একাধিক MoU
বিদেশে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীদের সাফল্য
জবির শিক্ষক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সরকারি-বেসরকারি খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান
সাবেক শিক্ষার্থী ও এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন“জবি আমাকে শিখিয়েছে আত্মবিশ্বাস আর পরিশ্রমের মানে। আজ আমি যেখানে আছি, তার পেছনে জবির অবদান অপরিসীম।”
জবির প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এখন বিসিএস, ব্যাংক, এনজিও ও বেসরকারি খাতে সফলভাবে কাজ করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেন্টার থেকে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত প্রশিক্ষণ পাচ্ছে।
তবে চাকরি-বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ায় দক্ষতা ও ইংরেজি পারদর্শিতা আরও জোরদার করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
দুই দশকের এই যাত্রা জবির জন্য সংগ্রাম ও সাফল্যের সমন্বয়।
পুরান ঢাকার ভেতর থেকে উঠে আসা এই বিশ্ববিদ্যালয় আজ দেশের উচ্চশিক্ষার শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলেছে।
প্রগতি টিভি/এন.জে.এস